একটি সুসংবাদ

নতুন (এপ্রিল ২০১২)

রোদের ছায়া
  • ২৪
  • 0
  • ৪৬
মিলির হাতে একটা বই '' নতুন শিশুর যত্ন '', কাল সাহেদ এনে দিয়ে বলল এখনি শিখে রাখো বুঝলে। কিন্তু মিলি বইতে মন দিতে পারছে না , কত কথা মনে পড়ছে বিছানায় শুয়ে থেকে , যেদিন এই বাড়িতে প্রথম এলো সেদিনের কথা থেকে শুরু করে সব কিছু । শাশুড়ির বাঁকা বাঁকা কথা গুলো এখনো মনে হলে খুব কষ্ট হয় , অথচ কতটা পাল্টে গেছেন এই কদিনে শাহানা বেগম মানে মিলির শাশুড়ি । আর সাহেদ কতটা পাল্টেছে তার যেন হিসাবই মেলাতে পারে না মিলি , কি আদুরে ভঙ্গিতেই না কথা বলে আজকাল সাহেদ মিলির সাথে ।

একটি মাত্র সংবাদ পাল্টে দিল মিলির জীবন, হয়ত সাহেদের ও নাহলে সাহেদ কে এত নতুন মনে হয় কেন , নতুন বাবা হবার খুশিতে সাহেদ তো আজকাল দিশাহারা । কি করবে না করবে, কিভাবে মিলির সব সমস্যা দূর করবে তাই যেন সারাক্ষণ ভাবছে , আর শাশুড়ি তো যত্নের চূড়ান্ত করছেন ।

''বৌমা দুধটুকু খেয়ে নিও'' টেবিল এ গ্লাসটা রাখতে রাখতে বললেন শাহানা বেগম , '' আর সারাদিন শুয়ে থাকলেই কি শরীর ভালো হবে , একটু হাটাচলাও তো করতে হবে ' কিছুটা উপদেশের স্বরে বলা কথা গুলো শুনে মিলি উঠে বসে , গ্লাসটা হাতে নিয়ে কছুক্ষন তাকিয়ে থাকে দুধের দিকে । দুধ খেতে এত কষ্ট কখনো হয়নি জীবনে , কি বিস্বাদ ।

মিলির বিয়ে হয়েছে তিন বছর হয়েছে গত জানুয়ারিতে , সাহেদ একটা প্রাইভেট বাংক এ চাকরি করছে , বাবা না থাকায় সংসারের দায়িত্ব বড় ছেলে হিসাবে সাহেদের উপর । সেতু আপা মানে সাহেদের বড় বোন থাকে মিরপুরে শশুরবাড়িতে , মাঝে মাঝেই বেড়াতে আসে , তবে আগে কখনই মিলির সাথে তেমন একটা কথা টথা বলত না , আজকাল প্রায় ফোনে খোজ নেন , মিলির শরীর কেমন , মাথা ঘোরানো কমেছে কিনা এইসব । সাহেদের ছোট ভাই শাহীন , একটা ভালো কলেজ এ অনার্স পরছে , এই দেবরটা খুবই ভালো, আগেও যেমন মিলিকে সম্মান করত , এখন যেন সেটা আরো বেড়ে গেছে ।

এই যে সবার মাঝে এত পরিবর্তন সেটা শুধু একটা সুসংবাদের জন্য , মিলির শরীরে বেড়ে উঠছে আরো একটা নতুন প্রাণ, মা হতে যাচ্ছে মিলি । শাশুড়ির এত দিনের ইচ্ছা পূরণ হতে যাচ্ছে , যে ইচ্ছার কথা বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় মিলিকে জানিয়েছিলেন শাহানা বেগম, '' তোমার শশুর তো কিছুই দেখে যেতে পারল না , আমি যেন সাহেদের সন্তান দেখে যেতে পারি'' শাশুড়ির এই কোথায় মিলি কিছুটা অসহায় চোখে তাকিয়েছিল , কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারে নাই । এর কিছুদিন পর সাহেদ যখন মায়ের ইচ্ছার কথা বলে মিলিকে বুঝতে লাগলো একটা সন্তান নেবার জন্য, মিলির ইচ্ছা না থাকলেও সাহেদের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে যায় মিলি , আর তখন থেকেই তার জীবনে শুরু হয় এক নতুন টানাপড়েন ।

বিয়ের তিন বছরে ও মা হতে পারে নাই মিলি , আর সে দিন গুলোতে কারো কাছ থেকেআশার কথা দুরে থাক সামান্য সান্তনা পর্যন্ত পায় নাই , সাহেদ মাঝে মাঝে সন্তান পাবার চেষ্টা জারি রাখতেই হয়তো মিলির কাছাকাছি হয়েছে কিন্তু কোথায় যেন তাল-লয় কেঁটে গিয়েছিল ওদের মাঝে ।

আর আজকাল সব কিছু নতুন ভাবে ধরা দিচ্ছে মিলির কাছে , সবার কত ভালো ভালো কথা , কিভাবে চললে সব ভালো হবে , কি করা ঠিক না কত উপদেশ , মাঝে মাঝে খারাপ লাগে আবার ভালোও লাগে ।এমনি কি কাজের মহিলাটি সুযোগ পেলেই কতরকম উপদেশ দেবার চেষ্টা করে , ''দুধ বেশি কইরা খাইয়েন আফা , তাইলে বাচ্চার গায়ের রং সুন্দর অইব '' কত দিন যে বলেছে বেচারী ।

নতুন একটা জীবনের অস্তিত্ব যখন টের পেল মিলি নিজের মাঝে , তখন একটা ঘোরের মাঝে ছিল কত দিন । খাবারে অরুচি, মাথা ঘোরা , কিছু খেলেই বমি করে দেয়া সব মিলে কিভাবে যে একটা মাস কাটল মনেই করতে পারছে না মিলি । মিলির সব চেয়ে ভালো লাগে সাহেদের নতুন রূপ , যেন সেই পৃথিবীর প্রথম বাবা হতে যাচ্ছে , অফিস থেকে কতবার যে ফোন করে তার ঠিক নেই । মাঝ খানের দুইটা বছর এই মানুষটাই কেমন যেন সব সময় এড়িয়ে চলতো বাসার সবাইকে এমন কি মিলিকেও ।

ওদিকে মিলির বাবা মা যেন এই নতুন খবরে , নতুন করে বাঁচতে শুরু করেছেন । সেদিন তো মিলির বাবা অসুস্থ্য শরীর নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় চলে এলেন মেয়েকে দেখতে , সাথে মায়ের দেওয়া আচার , তিলের নারু , পিঠা আরো কতকি । বাবার সাথে কখনই মিলিদের ভাই বোন কারো তেমন বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল না , কিন্তু সেদিন বাবা মিলির সাথে অনেক গল্প করলেন , নানা খুটি নাটি বিষয়ে কথা বললেন, এটাও মিলির জন্য নতুন একটা পাওয়া ।

আজ বাসায় কেও নেই , শাশুড়ি গেছেন মেয়ের বাড়ি , সাহেদ এখনো অফিস থেকে ফিরেনি । কাজের বুয়া চলে যায় দুপুরেই ..........বাসার মিলি একা । টিভির সামনে বসে কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে একটা অনুষ্ঠান দেখে , তারপর আবার হারিয়ে যায় ভাবনার রাজ্যে ...
'এই এত কি ভাবছো ? শরীর ঠিক আছে তো ?'' সাহেদের কথায় চমকে তাকায় মিলি , ''কখন এলে '' প্রশ্ন করে । টিভি দেখতে বসে কোথায় যে হারিয়ে গিয়েছিল মিলি , সাহেদ অফিস থেকে ফিরেছে খেয়াল করে নাই......''.বাসায় বোধ হয় কেও নেই '' মিলির দিকে ভালবাসার হাত বাড়ায় সাহেদ , মিলিও নিজেকে সাহেদের বুকে সপে দেয় , অনেক ক্ষণ সাহেদ মিলিকে বুকের সাথে জড়িয়ে বসে থাকে , এক সময় ফিসফিস করে বলে '' তুমি আমার জীবনকে একটা নতুন ভাল লাগায় ভরে দিলে মিলি , আমি তোমাকে খুব .......... ''। খুক খুক কাশির শব্দে মিলি সাহেদ দুজনই প্রায় লাফিয়ে দুদিকে সরে যায় ......কখন যে শাহীন এসে দরজায় দাড়িয়েছে কেও খেয়াল করে নি ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি Khub Sundor Golpo Pore Khub Valo Laglo ...Monta Valo Hoye Gelo.....Thik Jeno Ak Fali Roder Sayaer Motoi Tripti Pelam.. 5..Dilam.........
আপনার মন ভালো হয়ে গেল শুনে আমার মনটাও ভালো হয়ে গেল .......Kh Anisur Rahman Joti অনেক ধন্যবাদ থাকলো /
অম্লান অভি নতুনের রূপ অন্বেষণ সত্যি দারুণ বর্ণিলতা.........এমন করে সম্পর্ক সম্পর্কে জড়ায়। যেমন করে মৌমাছি-প্রজাপতি পরাগায়ন ঘটায়। দেবরের খুক খুক কাশিটা বড্ড বে-রসিক পাঠকের পঠনে ছেদ দিল................আগামীর আশায় রইলাম।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ অভি , কবিতার ঘরে ঘুরে আসবেন আশা রাখছি /
পাঁচ হাজার অনেক মেয়েকেই দেখেছি প্রেমিকের মা-বাবাকে শ্রদ্ধা-ভক্তিতে দেবতুল্য জ্ঞান করতে। আবার তারাই যখন সে সংসারে বউ হয়ে এসেছে ঘটনাগুলো বদলে গেছে, খিটিমিটি লেগেই থাকে। কার দোষ-গুন এটা বিচার্য নয় কিছুটা সহনশীল হলে সব ঠিক হয়ে যায়। এই যে মাতৃত্বের কারনে আদর যত্ন প্রাপ্তী, সবাই যদি এমনটা মনে রাখতো তাহলে আর কোন কষ্টই থাকতো না। গল্প ভাল লাগল।
ধন্যবাদ ৫০০০ ভাইজান , অনেক অনেক ভালো থাকবেন /
Israt শেষটা হঠাৎ করেই হয়ে গেল। তবে ছোটগল্পের জন্য বোধ হয় এটাই ঠিক হয়েছে। সব পরিবারের খুব কমন একটা পরিবর্তন গল্পের আকারে সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন।
ইসরাত আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় দেবার জন্য ..........ভালো থাকবেন সতত ..
সালেহ মাহমুদ ভালো লাগলো। হ্যা, নতুন মাতৃত্বের রূপটাই এমন। ধন্যবাদ অনুভূতির সুন্দর প্রকাশের জন্য।
কেন জানি না দেরী হয়ে গেল , অনেক ধন্যবাদ সালেহ ভাই...
কনা এই আপু,তুমি গল্প ও এত ভালো লেখ কিভাবে?
আমাকে লিজ্জায় ফেলে দিলে আপু , আমার তো মনে হয় তুমি লিখতে চাইলে এর চেয়ে হাজারগুন ভালো গল্প লিখতে পারবে .......এক বার চেষ্টা করেই দেখো / অনেক ধন্যবাদ কনাকে ......
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম প্রথম বাবা , মা হবার আনন্দ যে কি ধরনের আনন্দ তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। লেখক সুন্দর একটা ভাবনা তুলে ধরেছেন । ভাল লেগেছে ।
অনেক ধন্যবাদ সময় করে লেখাটি পড়ার জন্য , ভালো থাকবেন /
amar ami আগেই পরেছিলাম কিন্তু কমেন্ট করতে পারিনি......মেয়েদের jonyo সংসারটা আসলেই বিচিত্র জায়গা, jeno kha kha roddurer por kokhono kokhono কয়েক fota bristi...
আমার আমিকে ধন্যবাদ
আদিব নাবিল আক্তারুজ্জামান ভাইয়ের একটা গল্প পড়লাম। এটি যেন সেটির সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। সেটা কষ্টের বিচ্ছেদের...এটা আনন্দের মিলনের। ভাল লাগলো খুব গল্পটি। ‘কেও’ এর স্থলে ‘কেউ’ লিখলে মনে হয় ঠিক হয়।
আপনার ভালো লাগার কথা সুনে আমার খুব ভালো লাগছে , কেও = কেউ হবে, এটা খেয়াল করি নাই / অনেক ধন্যবাদ / কবিতাতেও আপনার উপস্থিতি আশা করছি / ( আপনার গল্পত অর্ধেক পড়েছি , বিদ্যুত চলে যাওয়ায় বাকিটা পড়া হয়নি , তাই কমেন্ট করা হয় নি )
ঝরা অনেক ভালো হয়েছে
ঝরাকে অনেক ধন্যবাদ সময় করে পড়ার জন্য .........

১৭ আগষ্ট - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪